G7 2025:মোদী এবং মার্ক কার্নির ঐতিহাসিক ঐক্য:-
G7 2025: মোদী এবং মার্ক কার্নির ঐতিহাসিক ঐক্য, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু এবং অর্থনীতিতে কি নতুন দিগন্ত নিয়ে এসেছে?: মার্ক কার্নি এবং নরেন্দ্র মোদীর অংশগ্রহণের পেছনের মূল কারণ
২০২৫ সালের G7 শীর্ষ সম্মেলন বিশ্ব রাজনীতির এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এবারের সম্মেলনে যে বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে, তা হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সাবেক ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর ও জাতিসংঘের জলবায়ু দূত মার্ক কার্নির উপস্থিতি। এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের অংশগ্রহণ শুধু প্রতীকী নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
সম্মেলনের প্রেক্ষাপট:
G7 (গ্রুপ অফ সেভেন) হল বিশ্বের সাতটি উন্নত অর্থনীতির দেশ – কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – এর সমন্বয়ে গঠিত একটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতি বছর, এই দেশগুলির নেতারা সমসাময়িক বৈশ্বিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিলিত হন।। এবারের শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ইতালির আপুলিয়া অঞ্চলে, যেখানে মূল আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল:
- জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সংকট
- উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য টেকসই অর্থায়ন
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নীতিমালা
- গ্লোবাল সাউথ-এর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও সহায়তা

নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতির তাৎপর্য:
ভারত G7-র সদস্য না হলেও মোদীর আমন্ত্রণের পেছনে রয়েছে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব। ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একাধিক আন্তর্জাতিক ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে G20 সভাপতিত্বকালে ভারত যেভাবে গ্লোবাল সাউথ-এর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে তা প্রশংসিত হয়েছে।
মোদীর মূল লক্ষ্য ছিল:
- G7 দেশগুলোর সাথে টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানো
- জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলা
- আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ‘লাইফ (পরিবেশের জন্য জীবনধারা)’ মডেল প্রচার করা
- গ্লোবাল সাউথ-এর দেশগুলোর পক্ষে কথা বলা

মার্ক কার্নির ভূমিকায় বৈশ্বিক জলবায়ু নেতৃত্ব:
মার্ক কার্নি এই সম্মেলনে বিশেষ দূত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ ও ক্লাইমেট ফাইন্যান্স নিয়ে তার অভিজ্ঞতা জানানোর জন্য।তার লক্ষ্য ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলিকে জলবায়ু অভিযোজন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির অর্থায়ন সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করা। কার্নির নেতৃত্বে, অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংক গ্লাসগো ফাইন্যান্সিয়াল অ্যালায়েন্স ফর নেট জিরো (GFANZ) এর অধীনে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কার্নির উপস্থিতির মূল উদ্দেশ্য ছিল:
নেট জিরো অর্জনের জন্য আর্থিক প্রতিশ্রুতি পুনর্নির্ধারণ করতে G7 দেশগুলিকে উৎসাহিত করা
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা
জলবায়ু ন্যায়বিচারের ধারণাটি তুলে ধরা

মোদী ও কার্নির মিলিত দৃষ্টিভঙ্গি:
যদিও মোদী ও কার্নির ভূমিকাগুলি আলাদা, তবে উভয়ের বক্তব্যেই একটি বিষয় স্পষ্ট—জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বকে একতাবদ্ধ হতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আরও বেশি সহায়তা দিতে হবে। মোদী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের দায় শুধু ধনী দেশগুলির নয়, কিন্তু দায়িত্ব অবশ্যই সমবন্টিত হওয়া উচিত”।
সম্মেলনের ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া:
G7 সম্মেলনের শেষে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়, যেখানে বলা হয়:
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বছরে $১০০ বিলিয়ন জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে
ক্লিন এনার্জি রূপান্তরের জন্য G7 ও অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়ানো হবে
গ্লোবাল সাউথ-এর জন্য একটি নতুন ‘Green Partnership Initiative’ চালু করা হয়েছে
এই ঘোষণাগুলি ভারতের এবং মার্ক কার্নির প্রস্তাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
উপসংহার:
২০২৫ সালের G7 শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী এবং মার্ক কার্নির অংশগ্রহণ শুধু কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোদী ভারতের তরফ থেকে গ্লোবাল সাউথ-এর কণ্ঠস্বর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং কার্নি জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বকে অর্থায়নে সুরক্ষা দিতে আহ্বান জানান। তাদের মিলিত অবস্থান আগামী দিনের আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে নতুন পথ দেখাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।